প্রেম নতুন গল্প
#প্রেম
#নতুন_গল্প
ওহ হ্যালো , পিছন থেকে সুরেলা কন্ঠস্বর শুনে সাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো অনিকেত।
একটু আগেই মেয়েটিকে বাম দিক থেকে বাজেভাবে ওভারটেক করে এসেছে। কোনো বাজে উদ্দেশে সেটা করেনি , আসলে আজ ইন্ডিয়া শ্রীলংকার ফাইনাল ম্যাচ। সেটা দেখার জন্য তাড়াতড়ি সাইকেল চালিয়ে স্টেশন থেকে মেসের দিকে আসছিলো সে। বটতলার কাছে এসে মেয়েটিকে ওভারটেক এমন ভাবে করেছে যে হয়তো মেয়েটি পরে যেত। তাই মেয়েটি পিছন থেকে ডেকেছে।
সামনে এসে দাঁড়ালো মেয়েটি মুখ ঢাকা ববি প্রিন্টার ওড়না দিয়ে। গভীর এবং টানাটানা দুটি চোখ , যখন রাস্তায় সাইকেল চালাতে জানোনা তখন বেরও কে।
কিছুটা অপ্রস্তুতে পরে গিয়েছিলো অনিকেত কি বলবে কিছুই বুঝতে পারলো না ,গলা দিয়ে কোনো আওয়াজ ও বেরোলো না। যদিও কান দুটো পুরো লাল হয়ে গিয়েছিল।
মেসে এসে দেখলো খেলা শুরু হয়ে গেছে ব্যাট করছে সহবাগ আর সচিন , শাহবাগের একটা বাউন্ডারি তে পুরো মেসে ভোরে উঠছে চিৎকার আর কোলাহলে। অন্য সময় হলে অনিকেতের চিৎকার সবচেয়ে বেশি সোনা যেত কিন্ত আজ কেমন যেন চুপচাপ অনিকেত , কেমন যেন বিষন্ন। তার কানে বাজছে একটাই কথা , ওহ হ্যালো আর চোখের সামনে ববি প্রিন্টেড ওড়না দিয়ে ঢাকা একটা মুখ আর শান্ত দীঘির মতো টানা টানা কাজলের থেকে গারো কালো রঙের দুটি চোখ।।
না সারাটা দিন কেমন যেন ঘরের মধ্যে কাটলো , খেলা দেখতে কিছুতেই মনস্থির করতে পারলো না , কিছুই যেন ভালো লাগছে না। ছাদে গিয়ে এক বসে রইলো কিছুক্ষন , কেউ যেন তার পিছনে এসে চুপিসারে বলছে ওহ হ্যালো।
এরপর থেকে বেশ কিছুদিন অনিমেষ ঘরের মধ্যে কাটালো , বন্ধুদের মাঝে গল্প করতে করতে কেমন যেন আনমনা হয়ে যায়। ক্লাসে মন বসাতে পারে না , ক্যান্টিনের আড্ডাটাও কেমন যেন বিস্বাদ লাগে।
বহুবার বটতলাতে গেছে যদি আবার দেখতে পায় তাকে কিন্তু বৃথা আশা মরিতে মরিতেও মরে না। আর অনিকেত কোনোদিন আর দেখতে পায়নি তাকে , তবুও সে রোজ বিকেলে গিয়ে দাঁড়ায় বটতলার মোর।
কালের নিয়মে আর সময়ের পরিবর্তনে মানুষ যেমন সব ভুলতে বসে তাই প্রায় মাস তিনেক পর অনিকেতের মন থেকেও ওই স্মৃতি ঝাপসা হতে শুরু করলো , মাঝে সেমেস্টার এক্সামের চাপ আর থার্ড ইয়ারে ওঠার আনন্দ ওই স্মৃতি টুকু প্রায় বিবর্ণ করে দিলো।
অনিকেত এখন থার্ড ইয়ারের স্টুডেন্ট , অন্য সকলের অনিকেত আজকে ইন্ট্রো নিতে গেলো ফার্স্ট ইয়ারের নতুন যারা ভর্তি হয়েছে তাদের।
প্রথমেই এক দুজনের ইন্ট্রো নিলো , কিন্ত অর্ক এসে জানালো ক্লাস টিচার আসছেন তাই রুম ছেড়ে বেরিয়ে গেলো।
পিরিয়ড শেষ করে অনিকেত এসে দাঁড়ালো ক্লাসের সামনের প্যাসেজ তাতে। অনেক নতুন নতুন মুখ দেখলো নিচে। একদিন অনিকেত ভয়ে ভয়ে এসেছিল এই কলেজ তারপর আস্তে আস্তে সব বদলে গেছে। সকলের ভালোভাসা পেয়েছে , যেই সিনিয়রদের এক সময় সবচেয়ে ভয় পেতো আজ তারাই আপন হয়ে গেছে। দেখতে দেখতে কি করে যেন দুটো বছর কেটে গেলো। বাকি আর মাত্র একটা বছর।
হটাৎ চোখ পড়লো একটা মেয়ের দিকে , নতুন মানে হচ্ছে কিছুক্ষন আগে যেখানে ইন্ট্রো নিতে গিয়েছিলো সেই ক্লাস রুম থেকেই বের হলো। বেস ভালো দেখতে মেয়েটাকে। ইস মিস হয়ে গেলো আগে জানলে এর আগে ইন্ট্রো তা নিতাম।
কিন্ত আজ মনে হয় আর হবে না। কাল এর ইন্ট্রো নিতে হবে দেখছি।
ইন্ট্রো নেয়ার সুযোগ তা পেলো দুই দিন পর যখন অনিকেতের ক্লাসের মৌমিতা হটাৎ তাকে এসে বললো একটা ফার্স্ট ইয়ার এসেছে খুব ঘ্যাম। চল একটু ইন্ট্রো নিয়ে আসি।
এসে দেখলো সেই মেয়েটি দুদিন আগেই দোতলার উপর থেকে যাকে দেখেছিলো। মেয়েটা মন দিয়ে একটা বই পড়ছে। এই তোর ইন্ট্রো দে বললো মৌমিতা।
আমি আত্রেয়ী রায় বাড়ি বিষ্ণুপুর বাসস্ট্যান্ড এর কাছে। আমি সাইন্স নিয়ে এইচ এস করে পলি ৪০ দিয়ে কেজিতে এসেছি।
বাবা পলি ৪০ দিয়ে এসেছিস এতেই এতো ঘ্যাম , তুই নাকি সুকন্যা কে তুই বলে কথা বলিস? প্রশ্ন করলো মৌমিতা।
দেখো দিদি সরকার যখন পলি ৪০ দিয়ে এন্ট্রান্সের ব্যবস্থা করেছে সুতরাং কিছু ভেবে চিনতে করেছে তাই আমার যোগ্যতা দিয়ে আমি সেখানে এপলাই করেছিলাম দিয়ে চান্স পেয়েছি সুতরাং সেই নিয়ে কোনো আপত্তি থাকার তো কথা নয়। আর সুকন্যা আমার ক্লাসমেট ছিল ও মাধ্যমিক দিয়ে এখানে ভর্তি হয়েছিল তাই আমার ছোটবেলাকার সম্পর্কের জেরে তুই বলে ডাকি জেতাতে আমি অভ্যস্ত।
দেখলি অনিকেত কেমন মেখে মুখে জবাব দেয় মেয়েট।
এতক্ষনে মুখ খুললো অনিকেত, এই ও তো অন্যায় কথা বলছে না। কিন্ত কি যেন নাম তোমার হ্যা আত্রেয়ী ইটা তো তোমার স্কুল বা পাড়ার বৈঠক নয় এখানে সিনিয়রদের সন্মান দেয়াটাই রীতি। আর তাছাড়া এরপরে কোনো চাকরি ক্ষেত্রে বা জীবনে অনেক কে দেখবে যারা তোমার থেকে কম বয়স বা সময় বয়সী হয়েও তোমার উপরে কাজ করবে তখন তুই তাদের সন্মান দিতেই হবে , আর তোমার কথার রেশ ধরে বলি ও যখন দুই বছর আগেই এখানে চান্স পেয়েছে তখন ওকে সন্মান দিতেও তো তোমার অপ্পত্তি থাকতে পারে না। জীবনে সন্মান দিলেই সন্মান পাওয়া যায় তাই কলেজের মধ্যে ওকে এবার থেকে দিদি বলে ডাকবে।
কিন্ত দাদা রোজ আমাকে শুনতে হয় বিভিন্ন কথা আমার কি দোষ বোলো কত লড়াই করে আমি এই জায়গায় পৌঁছেছি তবুও অনেকেই পলি ৪০ বলে আমাকে বলে।
দেখ আজ তোকে যারা বলছে তাদের কে ভালো রেজাল্ট করে তোকে প্রমান করতে হবে যে তুই এই জায়গার উপযুক্ত তার জন্য সময় আর নিষ্ঠা দুই লাগবে নাতো শুধু কথা দিয়ে যদি সবাইকে বোঝাতে যাস তাহলে অনেকেই তোর সময় আর কথা বলার ক্লান্তি শুধু বাড়বে।
এমন করেই শুরু হলো আত্রেয়ী আর অনিকেতের প্রথম কথা বলার পালা।
আত্রেয়ী কেন জানিনা বেশ ভালো লাগলো অনিকেতের কথা গুলো।
এর পর যে কোনো দরকারে এতেই খুঁজে নিতো অনিকেত কে।
প্রথম সিমেস্টার এর পর রেজাল্ট বেরোলে দেখা গেলো আত্রেয়ী ৯০ পার্সেন্ট নম্বর পেয়ে ক্লাস এর মধ্যে তৃতীয় হয়েছে।
সেই খবর তাই এসে সে জানালো অনিকেত কে। অনিকেত শুনে বললো এই স্পিরিট ধরে রাখ , আগামী দিনেও এরকম করে তোকে এগিয়ে যেতে হবে। থ্যাংক ইউ অনিকেত দা তুমি যদি আমাকে প্রথম দিন এমন করে না বোঝাতে তবে হয়তো আমি ডিমোরালাইস হয়ে পরতাম আর তোমার কাছে যথেষ্ট গাইডেন্স পেয়েছি তাই আমি তোমার কাছে যথেষ্ট ঋণী।
আজকে বিকেলে সময় হলে আমি তোমাকে খাওয়াতে চাই। প্লিস না বোলো না।
খাওয়া দাবার পর দুজনে হাটছে পাশাপাশি অনিকেত আর আত্রেয়ী। কথাবার্তার তালে তালে পাশাপাশি চলতে চলতে তাদের হাত গুলিতে লাগছে একে অন্যের হালকা স্পর্শ। অনিকেতের কেমন যেন আবেশ এলো আর নিজের অজান্তেই হাত ধরলো আত্রেয়ীর বিদ্যুৎ স্পর্শের মতো হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে আত্রেয়ী বললো ছি অনিকেত দা তুমিও এরকম , আমি ভাবি নি। বলে জোরে হাত দিলো সামনের পথে , আস্তে আস্তে সামনে মিলিয়ে গেলো আত্রেয়ী। পিছনে পরে রইলো অনিকেত , কেমন হটাৎ সবকিছু ঘটে গেলো যে সম্বিৎ ফায়ার পেতে তার কিছুক্ষন সময় লাগল।
নিজের উপর খুব রাগ হলো অনিকেতের কেন এমন অবিবেচকের মতো সে হাতটা ধরতে গেলো।
এর ঘটনার পর থেকে আত্রেয়ী আর অনিকেতের সাথে কথা বলতো না। অনিকেত ও নিজের ভুলের জন্য কখনো সামনে গিয়ে তার কাছে ক্ষমা চাইনি।
অবশেষে এলো সেই দিন যেদিন অনিকেত দের বিদায় নেবার দিন , ফেয়ারওয়েল অনুষ্ঠান। সকল থেকে নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দিনটা কেটে গেলো। হটাৎ আজ অনিকেতের মানে পড়লো আত্রেয়ীর কথা ভাবলো যে আজ একবার অন্তত তার কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত যাবার আগে অন্তত একবার তাকে সেদিনের জন্য ক্ষমা চাওয়া জরুরি।
সেই মতো ওর ক্লাসের জুনিয়র অপূর্ব কে বললো ভাই একটা কাজ করতো , আত্রেয়ী কে ডেকে আন।
অপূর্ব বললো কেন দাদা ?
যা না।
একটা কাজ আছে।
কি কাজ দাদা , ও হো , বুঝেছি দাড়াও যাচ্ছি দিয়ে একটা বাঁকা তির্যক হাঁসি দিয়ে ডাকতে গেলো।
এর পর থেকেই অনিকেতের বুকের ভেতর কেমন ধড়াস ধড়াস করতে লাগলো কি বলবে। আত্রেয়ী কে।
আত্রেয়ী কি আদৌ আসবে ?
বাচ্চা যদি আসে তাহলে অপূর্ব কে যেকোনো উপায়ে পাঠিয়ে দিতে হবে।
প্রায় ১৫ মিনিট পর আত্রেয়ী কে সঙ্গে নিয়ে অপূর্ব এগিয়ে আসছে।
কিন্ত আত্রেয়ী এসে দাঁড়ালো সামনে , পড়ন্ত বিকেলের সূর্যের লালাভ আলোতে অপরূপ লাগছে তার মুখ খানা , পড়েছে একটা সুন্দর লাল রঙের চুড়িদার আর লাল রঙের ববি প্রিন্টেড ওড়না।। ওড়নার দিকে দেখে চমকে উঠলো অনিকেত।
নিজেকে সামলিয়ে অপূর্ব কে বললো ভাই একটু ঘুরে আইত।
তুমি না দাদা। বাচ্চা ঠিক আছে যাচ্ছি , রেজাল্ট যেন পসিটিভ হয় বলে চলে গেলো আবার সেই বাঁকা তির্যক হাঁসি দিয়ে।
আত্রেয়ী ,
হুম
সেদিনের ঘটনাটা আমার কাছে আজও লজ্জ্যা জনক। আজ যাবার দিনে আমি আর কারোর মনে খেদ রেখে যেতে চাইনা।
দেখ তুই কথা আর আন্তরিকতার জন্য সেদিন হয়তো নিজেকে ধরে রাখতে পারিনি , কিন্ত আমার মনে কোনো কোনো খারাপ উদ্দেশ্য ছিল না। এবং মনে মনে আমি এতদিন যতটা অনুতাপ করেছি তা কি ওই পাপস্খলনের জন্য যথেষ্ট নয়।
কিছুক্ষন চুপ করে থাকলো আত্রেয়ী , বললো আমিও সেদিন ঘটনার আকস্মিকতায় ঘাবড়ে গিয়েছিলাম , পরে বুঝেছি অমন পরিস্থিতিতে ওটা হয়তো তুমি ঠিক করোনি কিন্তু সারাজীবন তোমাকে তার জন্য অনুতপ্ত রাখাও উচিত নয়। তুমি আমাকে যথেষ্ট পরিণত করেছো অনিকেত দা। তাই আজ থেকে আমি আর কিছু মনে রাখলাম না। কন্টাক্ট রেখো কেমন।
বলে আত্রেয়ী যাবার জন্য উদ্যত হলে অনিকেত বললো , একটা রিকোয়েস্ট করবো আত্রেয়ী ,
হ্যা বোলো ,
একবার তোর ওড়না তা মুখের কাছে বাঁধবি।
এমন আশ্চর্য আবদার শুনে আত্রেয়ী কিছুক্ষন স্থির হয়ে রইলো অনিকেতের দিকে তারপর বললো কেন বলতো?
প্লিস একবার বাঁধ না , তারপর বলছি।
দিয়ে অনিকেতের কথা মতো আত্রেয়ী মুখের কাছে ওড়না তা বেঁধে দাঁড়াতেই।
চমকে উঠলো অনিকেত , একি দেখছে সে , গত বছর জেক এতো করে খুঁজেছে সে এতো কাছে থাকতেও এতদিন চিনতে পারলো না , না তার চোখ ডেকে না তার গলা শুনে ,
কিন্তু কত রাতে তো সে স্বপ্নে ডেকেছে এই দুটি চোখ আর শুনেছে , ওহ হ্যালো ।।।
হাটু মুড়ে বসে পড়লো আত্রেয়ীর সামনে অনিকেত।
কি হলো অনিকেত দা , আত্রেয়ী বলছে। বোলো কি হলো।
অনিকেত মুখ তুলে তাকিয়ে আস্তে আস্তে সব ঘটনা বললো।
আত্রেয়ী কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বললো , হুম আমি ছিলাম ওই মেয়েটা আর তাই আমার ও কেমন তোমাকে চেনা চেনা লাগতো।
একটা কথা বলবো অনিকেত দা ,
হা বল ,
এবার থেকে কোনো মেয়েকে দেন দিক থেকে ওভারটেক করবে না। কোনো মেয়েকে ওভারটেক এ করবে না ,
আর শোনো হাত ধরার হলে সারাজীবন পশে থাকার জন্য ধরবে , রাস্তাতে ক্ষনিকের জন্য নয় ,
আর শোনো আর কোনোদিন কোনো মেয়ের হাত ধরতে যেও না , যদি মনে হয় আমার হাত তোমার জন্য রইলো তোমার হাতটা সব সময়ের ধরার জন্য , এগিয়ে এসে অনিকেতের হাত তা ধরলো।
দুজনে তাকিয়ে থাকলো দুজনের চোখের দিকে ,
অডিটে প্রোগ্রাম শুরু হয়ে গেছে ,
একটা গান বাজছে ,
আমি তোমার সঙ্গে বেঁধেছি আমার প্রাণ সুরের ও বাঁধনে।।।।।।।।।।
ছবিটির জন্ জন্য একজনের কাছে ঋণী, তার এই সুন্দর ছবিটি না পেলে হইতো এই গল্পটা লিখতে ইচ্ছে হতো না।
একদিন কথার চলে এই ছবিটি আঁকতে বলেছিলাম আর সে এঁকে দিয়েছিল তাই এই গল্প l
#নতুন_গল্প
ওহ হ্যালো , পিছন থেকে সুরেলা কন্ঠস্বর শুনে সাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো অনিকেত।
একটু আগেই মেয়েটিকে বাম দিক থেকে বাজেভাবে ওভারটেক করে এসেছে। কোনো বাজে উদ্দেশে সেটা করেনি , আসলে আজ ইন্ডিয়া শ্রীলংকার ফাইনাল ম্যাচ। সেটা দেখার জন্য তাড়াতড়ি সাইকেল চালিয়ে স্টেশন থেকে মেসের দিকে আসছিলো সে। বটতলার কাছে এসে মেয়েটিকে ওভারটেক এমন ভাবে করেছে যে হয়তো মেয়েটি পরে যেত। তাই মেয়েটি পিছন থেকে ডেকেছে।
সামনে এসে দাঁড়ালো মেয়েটি মুখ ঢাকা ববি প্রিন্টার ওড়না দিয়ে। গভীর এবং টানাটানা দুটি চোখ , যখন রাস্তায় সাইকেল চালাতে জানোনা তখন বেরও কে।
কিছুটা অপ্রস্তুতে পরে গিয়েছিলো অনিকেত কি বলবে কিছুই বুঝতে পারলো না ,গলা দিয়ে কোনো আওয়াজ ও বেরোলো না। যদিও কান দুটো পুরো লাল হয়ে গিয়েছিল।
মেসে এসে দেখলো খেলা শুরু হয়ে গেছে ব্যাট করছে সহবাগ আর সচিন , শাহবাগের একটা বাউন্ডারি তে পুরো মেসে ভোরে উঠছে চিৎকার আর কোলাহলে। অন্য সময় হলে অনিকেতের চিৎকার সবচেয়ে বেশি সোনা যেত কিন্ত আজ কেমন যেন চুপচাপ অনিকেত , কেমন যেন বিষন্ন। তার কানে বাজছে একটাই কথা , ওহ হ্যালো আর চোখের সামনে ববি প্রিন্টেড ওড়না দিয়ে ঢাকা একটা মুখ আর শান্ত দীঘির মতো টানা টানা কাজলের থেকে গারো কালো রঙের দুটি চোখ।।
না সারাটা দিন কেমন যেন ঘরের মধ্যে কাটলো , খেলা দেখতে কিছুতেই মনস্থির করতে পারলো না , কিছুই যেন ভালো লাগছে না। ছাদে গিয়ে এক বসে রইলো কিছুক্ষন , কেউ যেন তার পিছনে এসে চুপিসারে বলছে ওহ হ্যালো।
এরপর থেকে বেশ কিছুদিন অনিমেষ ঘরের মধ্যে কাটালো , বন্ধুদের মাঝে গল্প করতে করতে কেমন যেন আনমনা হয়ে যায়। ক্লাসে মন বসাতে পারে না , ক্যান্টিনের আড্ডাটাও কেমন যেন বিস্বাদ লাগে।
বহুবার বটতলাতে গেছে যদি আবার দেখতে পায় তাকে কিন্তু বৃথা আশা মরিতে মরিতেও মরে না। আর অনিকেত কোনোদিন আর দেখতে পায়নি তাকে , তবুও সে রোজ বিকেলে গিয়ে দাঁড়ায় বটতলার মোর।
কালের নিয়মে আর সময়ের পরিবর্তনে মানুষ যেমন সব ভুলতে বসে তাই প্রায় মাস তিনেক পর অনিকেতের মন থেকেও ওই স্মৃতি ঝাপসা হতে শুরু করলো , মাঝে সেমেস্টার এক্সামের চাপ আর থার্ড ইয়ারে ওঠার আনন্দ ওই স্মৃতি টুকু প্রায় বিবর্ণ করে দিলো।
অনিকেত এখন থার্ড ইয়ারের স্টুডেন্ট , অন্য সকলের অনিকেত আজকে ইন্ট্রো নিতে গেলো ফার্স্ট ইয়ারের নতুন যারা ভর্তি হয়েছে তাদের।
প্রথমেই এক দুজনের ইন্ট্রো নিলো , কিন্ত অর্ক এসে জানালো ক্লাস টিচার আসছেন তাই রুম ছেড়ে বেরিয়ে গেলো।
পিরিয়ড শেষ করে অনিকেত এসে দাঁড়ালো ক্লাসের সামনের প্যাসেজ তাতে। অনেক নতুন নতুন মুখ দেখলো নিচে। একদিন অনিকেত ভয়ে ভয়ে এসেছিল এই কলেজ তারপর আস্তে আস্তে সব বদলে গেছে। সকলের ভালোভাসা পেয়েছে , যেই সিনিয়রদের এক সময় সবচেয়ে ভয় পেতো আজ তারাই আপন হয়ে গেছে। দেখতে দেখতে কি করে যেন দুটো বছর কেটে গেলো। বাকি আর মাত্র একটা বছর।
হটাৎ চোখ পড়লো একটা মেয়ের দিকে , নতুন মানে হচ্ছে কিছুক্ষন আগে যেখানে ইন্ট্রো নিতে গিয়েছিলো সেই ক্লাস রুম থেকেই বের হলো। বেস ভালো দেখতে মেয়েটাকে। ইস মিস হয়ে গেলো আগে জানলে এর আগে ইন্ট্রো তা নিতাম।
কিন্ত আজ মনে হয় আর হবে না। কাল এর ইন্ট্রো নিতে হবে দেখছি।
ইন্ট্রো নেয়ার সুযোগ তা পেলো দুই দিন পর যখন অনিকেতের ক্লাসের মৌমিতা হটাৎ তাকে এসে বললো একটা ফার্স্ট ইয়ার এসেছে খুব ঘ্যাম। চল একটু ইন্ট্রো নিয়ে আসি।
এসে দেখলো সেই মেয়েটি দুদিন আগেই দোতলার উপর থেকে যাকে দেখেছিলো। মেয়েটা মন দিয়ে একটা বই পড়ছে। এই তোর ইন্ট্রো দে বললো মৌমিতা।
আমি আত্রেয়ী রায় বাড়ি বিষ্ণুপুর বাসস্ট্যান্ড এর কাছে। আমি সাইন্স নিয়ে এইচ এস করে পলি ৪০ দিয়ে কেজিতে এসেছি।
বাবা পলি ৪০ দিয়ে এসেছিস এতেই এতো ঘ্যাম , তুই নাকি সুকন্যা কে তুই বলে কথা বলিস? প্রশ্ন করলো মৌমিতা।
দেখো দিদি সরকার যখন পলি ৪০ দিয়ে এন্ট্রান্সের ব্যবস্থা করেছে সুতরাং কিছু ভেবে চিনতে করেছে তাই আমার যোগ্যতা দিয়ে আমি সেখানে এপলাই করেছিলাম দিয়ে চান্স পেয়েছি সুতরাং সেই নিয়ে কোনো আপত্তি থাকার তো কথা নয়। আর সুকন্যা আমার ক্লাসমেট ছিল ও মাধ্যমিক দিয়ে এখানে ভর্তি হয়েছিল তাই আমার ছোটবেলাকার সম্পর্কের জেরে তুই বলে ডাকি জেতাতে আমি অভ্যস্ত।
দেখলি অনিকেত কেমন মেখে মুখে জবাব দেয় মেয়েট।
এতক্ষনে মুখ খুললো অনিকেত, এই ও তো অন্যায় কথা বলছে না। কিন্ত কি যেন নাম তোমার হ্যা আত্রেয়ী ইটা তো তোমার স্কুল বা পাড়ার বৈঠক নয় এখানে সিনিয়রদের সন্মান দেয়াটাই রীতি। আর তাছাড়া এরপরে কোনো চাকরি ক্ষেত্রে বা জীবনে অনেক কে দেখবে যারা তোমার থেকে কম বয়স বা সময় বয়সী হয়েও তোমার উপরে কাজ করবে তখন তুই তাদের সন্মান দিতেই হবে , আর তোমার কথার রেশ ধরে বলি ও যখন দুই বছর আগেই এখানে চান্স পেয়েছে তখন ওকে সন্মান দিতেও তো তোমার অপ্পত্তি থাকতে পারে না। জীবনে সন্মান দিলেই সন্মান পাওয়া যায় তাই কলেজের মধ্যে ওকে এবার থেকে দিদি বলে ডাকবে।
কিন্ত দাদা রোজ আমাকে শুনতে হয় বিভিন্ন কথা আমার কি দোষ বোলো কত লড়াই করে আমি এই জায়গায় পৌঁছেছি তবুও অনেকেই পলি ৪০ বলে আমাকে বলে।
দেখ আজ তোকে যারা বলছে তাদের কে ভালো রেজাল্ট করে তোকে প্রমান করতে হবে যে তুই এই জায়গার উপযুক্ত তার জন্য সময় আর নিষ্ঠা দুই লাগবে নাতো শুধু কথা দিয়ে যদি সবাইকে বোঝাতে যাস তাহলে অনেকেই তোর সময় আর কথা বলার ক্লান্তি শুধু বাড়বে।
এমন করেই শুরু হলো আত্রেয়ী আর অনিকেতের প্রথম কথা বলার পালা।
আত্রেয়ী কেন জানিনা বেশ ভালো লাগলো অনিকেতের কথা গুলো।
এর পর যে কোনো দরকারে এতেই খুঁজে নিতো অনিকেত কে।
প্রথম সিমেস্টার এর পর রেজাল্ট বেরোলে দেখা গেলো আত্রেয়ী ৯০ পার্সেন্ট নম্বর পেয়ে ক্লাস এর মধ্যে তৃতীয় হয়েছে।
সেই খবর তাই এসে সে জানালো অনিকেত কে। অনিকেত শুনে বললো এই স্পিরিট ধরে রাখ , আগামী দিনেও এরকম করে তোকে এগিয়ে যেতে হবে। থ্যাংক ইউ অনিকেত দা তুমি যদি আমাকে প্রথম দিন এমন করে না বোঝাতে তবে হয়তো আমি ডিমোরালাইস হয়ে পরতাম আর তোমার কাছে যথেষ্ট গাইডেন্স পেয়েছি তাই আমি তোমার কাছে যথেষ্ট ঋণী।
আজকে বিকেলে সময় হলে আমি তোমাকে খাওয়াতে চাই। প্লিস না বোলো না।
খাওয়া দাবার পর দুজনে হাটছে পাশাপাশি অনিকেত আর আত্রেয়ী। কথাবার্তার তালে তালে পাশাপাশি চলতে চলতে তাদের হাত গুলিতে লাগছে একে অন্যের হালকা স্পর্শ। অনিকেতের কেমন যেন আবেশ এলো আর নিজের অজান্তেই হাত ধরলো আত্রেয়ীর বিদ্যুৎ স্পর্শের মতো হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে আত্রেয়ী বললো ছি অনিকেত দা তুমিও এরকম , আমি ভাবি নি। বলে জোরে হাত দিলো সামনের পথে , আস্তে আস্তে সামনে মিলিয়ে গেলো আত্রেয়ী। পিছনে পরে রইলো অনিকেত , কেমন হটাৎ সবকিছু ঘটে গেলো যে সম্বিৎ ফায়ার পেতে তার কিছুক্ষন সময় লাগল।
নিজের উপর খুব রাগ হলো অনিকেতের কেন এমন অবিবেচকের মতো সে হাতটা ধরতে গেলো।
এর ঘটনার পর থেকে আত্রেয়ী আর অনিকেতের সাথে কথা বলতো না। অনিকেত ও নিজের ভুলের জন্য কখনো সামনে গিয়ে তার কাছে ক্ষমা চাইনি।
অবশেষে এলো সেই দিন যেদিন অনিকেত দের বিদায় নেবার দিন , ফেয়ারওয়েল অনুষ্ঠান। সকল থেকে নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দিনটা কেটে গেলো। হটাৎ আজ অনিকেতের মানে পড়লো আত্রেয়ীর কথা ভাবলো যে আজ একবার অন্তত তার কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত যাবার আগে অন্তত একবার তাকে সেদিনের জন্য ক্ষমা চাওয়া জরুরি।
সেই মতো ওর ক্লাসের জুনিয়র অপূর্ব কে বললো ভাই একটা কাজ করতো , আত্রেয়ী কে ডেকে আন।
অপূর্ব বললো কেন দাদা ?
যা না।
একটা কাজ আছে।
কি কাজ দাদা , ও হো , বুঝেছি দাড়াও যাচ্ছি দিয়ে একটা বাঁকা তির্যক হাঁসি দিয়ে ডাকতে গেলো।
এর পর থেকেই অনিকেতের বুকের ভেতর কেমন ধড়াস ধড়াস করতে লাগলো কি বলবে। আত্রেয়ী কে।
আত্রেয়ী কি আদৌ আসবে ?
বাচ্চা যদি আসে তাহলে অপূর্ব কে যেকোনো উপায়ে পাঠিয়ে দিতে হবে।
প্রায় ১৫ মিনিট পর আত্রেয়ী কে সঙ্গে নিয়ে অপূর্ব এগিয়ে আসছে।
কিন্ত আত্রেয়ী এসে দাঁড়ালো সামনে , পড়ন্ত বিকেলের সূর্যের লালাভ আলোতে অপরূপ লাগছে তার মুখ খানা , পড়েছে একটা সুন্দর লাল রঙের চুড়িদার আর লাল রঙের ববি প্রিন্টেড ওড়না।। ওড়নার দিকে দেখে চমকে উঠলো অনিকেত।
নিজেকে সামলিয়ে অপূর্ব কে বললো ভাই একটু ঘুরে আইত।
তুমি না দাদা। বাচ্চা ঠিক আছে যাচ্ছি , রেজাল্ট যেন পসিটিভ হয় বলে চলে গেলো আবার সেই বাঁকা তির্যক হাঁসি দিয়ে।
আত্রেয়ী ,
হুম
সেদিনের ঘটনাটা আমার কাছে আজও লজ্জ্যা জনক। আজ যাবার দিনে আমি আর কারোর মনে খেদ রেখে যেতে চাইনা।
দেখ তুই কথা আর আন্তরিকতার জন্য সেদিন হয়তো নিজেকে ধরে রাখতে পারিনি , কিন্ত আমার মনে কোনো কোনো খারাপ উদ্দেশ্য ছিল না। এবং মনে মনে আমি এতদিন যতটা অনুতাপ করেছি তা কি ওই পাপস্খলনের জন্য যথেষ্ট নয়।
কিছুক্ষন চুপ করে থাকলো আত্রেয়ী , বললো আমিও সেদিন ঘটনার আকস্মিকতায় ঘাবড়ে গিয়েছিলাম , পরে বুঝেছি অমন পরিস্থিতিতে ওটা হয়তো তুমি ঠিক করোনি কিন্তু সারাজীবন তোমাকে তার জন্য অনুতপ্ত রাখাও উচিত নয়। তুমি আমাকে যথেষ্ট পরিণত করেছো অনিকেত দা। তাই আজ থেকে আমি আর কিছু মনে রাখলাম না। কন্টাক্ট রেখো কেমন।
বলে আত্রেয়ী যাবার জন্য উদ্যত হলে অনিকেত বললো , একটা রিকোয়েস্ট করবো আত্রেয়ী ,
হ্যা বোলো ,
একবার তোর ওড়না তা মুখের কাছে বাঁধবি।
এমন আশ্চর্য আবদার শুনে আত্রেয়ী কিছুক্ষন স্থির হয়ে রইলো অনিকেতের দিকে তারপর বললো কেন বলতো?
প্লিস একবার বাঁধ না , তারপর বলছি।
দিয়ে অনিকেতের কথা মতো আত্রেয়ী মুখের কাছে ওড়না তা বেঁধে দাঁড়াতেই।
চমকে উঠলো অনিকেত , একি দেখছে সে , গত বছর জেক এতো করে খুঁজেছে সে এতো কাছে থাকতেও এতদিন চিনতে পারলো না , না তার চোখ ডেকে না তার গলা শুনে ,
কিন্তু কত রাতে তো সে স্বপ্নে ডেকেছে এই দুটি চোখ আর শুনেছে , ওহ হ্যালো ।।।
হাটু মুড়ে বসে পড়লো আত্রেয়ীর সামনে অনিকেত।
কি হলো অনিকেত দা , আত্রেয়ী বলছে। বোলো কি হলো।
অনিকেত মুখ তুলে তাকিয়ে আস্তে আস্তে সব ঘটনা বললো।
আত্রেয়ী কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বললো , হুম আমি ছিলাম ওই মেয়েটা আর তাই আমার ও কেমন তোমাকে চেনা চেনা লাগতো।
একটা কথা বলবো অনিকেত দা ,
হা বল ,
এবার থেকে কোনো মেয়েকে দেন দিক থেকে ওভারটেক করবে না। কোনো মেয়েকে ওভারটেক এ করবে না ,
আর শোনো হাত ধরার হলে সারাজীবন পশে থাকার জন্য ধরবে , রাস্তাতে ক্ষনিকের জন্য নয় ,
আর শোনো আর কোনোদিন কোনো মেয়ের হাত ধরতে যেও না , যদি মনে হয় আমার হাত তোমার জন্য রইলো তোমার হাতটা সব সময়ের ধরার জন্য , এগিয়ে এসে অনিকেতের হাত তা ধরলো।
দুজনে তাকিয়ে থাকলো দুজনের চোখের দিকে ,
অডিটে প্রোগ্রাম শুরু হয়ে গেছে ,
একটা গান বাজছে ,
আমি তোমার সঙ্গে বেঁধেছি আমার প্রাণ সুরের ও বাঁধনে।।।।।।।।।।
ছবিটির জন্ জন্য একজনের কাছে ঋণী, তার এই সুন্দর ছবিটি না পেলে হইতো এই গল্পটা লিখতে ইচ্ছে হতো না।
একদিন কথার চলে এই ছবিটি আঁকতে বলেছিলাম আর সে এঁকে দিয়েছিল তাই এই গল্প l

Comments
Post a Comment