কলেজ প্রেম ০2

# প্রেম 2
বিষ্ণুপুর ও তো কৃষ্ণের স্থান ওখানে গেলে প্রেম পিরিতি করবে , সুধেন বাবু দীপের বাবার উদ্দেশে এই কথাটি বলে পান খাওয়া দাঁতে একটা হাসি দিলেন ।
না আসলে অনেক পুরনো কলেজ আর কলকাতার থেকে জেলার কলেজে পড়াশুনা ভালো হবে তাই তো দীপ কে ওখানে ভর্তি করালাম।
কথাকটি বলে দীপের বাবা দীপের দিকে তাকিয়ে বললেন কিরে পড়াশুনা ছাড়া অন্য কোনদিকে নজর দিলে কিন্তু সেদিনই কলেজ ছাড়িয়ে দেব ।
ছোটবেলা থেকেই দীপ জানত বাবা এক কথার মানুষ তাই মনের মধ্যে এটা মেনে নিয়েছিল কেজি তে পড়ার সময় পড়াশুনা ছাড়া অন্য দিকে নজর দিলে মুশকিল।
সেই ভেবেই সে পা দিলো নতুন কলেজে, কেজি কলেজ বিষ্ণুপুরে।
বাবার এক বন্ধুর বাড়িতে থাকে,যদিও বাবার বন্ধুর পরিবারের কেউ সেখানে থাকে না।ভবিষ্যতের জন্য তৈরি করে রেখেছেন।
তাই একা বাড়িতে এসে সে বেশ বিচলিত হল।
কিন্তু বাবা তাকে কিছুতেই মেস বা হোস্টেল থাকতে দেবেন না। অগত্যা সে জীবনের মধুর দিনগুলো উচ্ছলতার দিনগুলো কোনরূপ রসাস্বাদন না করে মুখ গুমরে পরে রইলো।
সারাদিন কলেজের ক্লাস দিনের শেষে থাকার জায়গায় এসে পড়াশুনা তারপর হোটেল গিয়ে খাওয়াদাওয়া।
আর ঘুম।
সপ্তাহ অন্তে বাড়ি যাওয়া আবার সোমবার সকালে ফিরে যাওয়া বিষ্ণুপুরে।
এই করেই চারটে সেমিস্টার কাটিয়ে দিলো।
তেমন কোনো ভালো বন্ধু বানাতে পারলো না। না পারলো কলেজের অনুষ্ঠান গুলোতে চুটিয়ে আনন্দ করতে।
সেমেস্টার রেজাল্ট ভালই হচ্ছিল বরাবর ৮৫ পার্সেন্ট এর বেশি নম্বর পেয়েছে।
কিন্তু ভেতরে যেনো কেমন একা। অন্তর্মুখী যেনো দম দেওয়া কোনো ঘড়ির মত জীবন পার করছে।
শেষের বছর টাও এমন করেই কেটে যেত যদি না সেদিন রাহুল ওকে প্রায় জোর করে নতুন ব্যাচ এর ইন্ট্রো নিতে নিয়ে যেত।
ইলেকট্রিক্যাল প্রথম বর্ষের রুম সবাই নতুন ছেলে মেয়েদের ইন্ট্রো নিচ্ছে।
দীপের নিজের স্বভাব বসে এক কোনায় দাড়িয়ে আছে।
একটা মেয়ের দিকে তাকিয়ে সৌভিক প্রশ্ন করলো" এই তোর নাম বল"?
সোমা ব্যানার্জী
বাড়ি কোথায়?
সোনামুখী
বীরেন প্রশ্ন করলো বলতো রবীন্দ্রনাথ আর রামছাগলের মধ্যে সম্পর্ক কি?
মেয়েটি মাথা নিচু করে জবাব দিল দুজনের দাড়ি আছে।
ছেলেরা পছন্দ মত উত্তর পেয়ে পরি জনের দিকে এগিয়ে গেলো শুধু দীপ মেয়েটির কাছে এসে বললো রবীন্দ্রনাথ বাঙালির চেতনা তার সাথে কোনো দিন রামছাগলের তুলনা হতে পারে না।
কিন্তু দাদারা উত্তর চেয়েচিল না উত্তর পেলে আরো প্রশ্ন করত।
দীপ বলল তাহলে বলতে পারতে দুটোই জীবকুলের প্রতিনিধি।
বলে সেখান থেকে চলে গেলো এই প্রথম সে কলেজ আসা ইস্তক কোনো মেয়ে র সাথে কথা বললো।
প্রায় আড়াই মাস পরের ঘটনা,
দীপ নতুন মোবাইল পেয়েচে তার মামার কাছে। এতদিন নোকিয়া ১৫০০ ব্যবহার করার পর হাতে পেতেছে স্যামসাং গ্যালাক্সি স্মার্ট ফোন কত কি আছে এতে।
দীপের এক দাদা বিদেশে থাকে তার সাথে এতদিন মেলে কথাবার্তা হত,সেই একদিন বললো ভাই তুই অরকুট অ্যাকাউন্ট খোল,সহজে কথা বলা যাবে।
সেই মত অরকুট অ্যাকাউন্ট খুললো দীপ।
কিছুদিন পর অরকুট পরিচিত লোকদের দেখতে পেলো। ফ্রেন্ড রকুয়েস্ট পেলো। কিন্তু দীপ প্রধানত অরকুট খুলতো দাদার সাথে কথা বলার জন্য শনিবার সন্ধ্যা ৬ টাই।
এমনি এক শনিবার অরকুট খুলে দাদার সাথে কথা বলার পর হটাত দেখলো নিউ ফ্রেন্ড রেকোয়েস্ট নাম " সোমা ব্যানার্জী"
কি হবে অ্যাকসেপ্ট করে নিল।
সোমবার কলেজ থেকে ফেরার পথে সোমা বন্ধুদের সাথে দাড়িয়ে গল্পঃ করছে।
দীপের যেনো মনে হল আর চোখে ওকে সোমা দেখলো। সেদিন প্রথম দীপ দেখলো সোমার বাম গালে একটা হালকা তিল আছে। তাতে মুখে এক অপরূপ স্নিগ্ধতা ঝরে পড়ছে।
যথারীতি শনিবার অরকুট খুলেছে দীপ দেখলো ম্যাসাজ এসেছে প্রেরক সোমা ব্যানার্জী,
কি দাদা এত গোমড়া মুখে ঘুরে বেরাও কেনো। আর রবীন্দ্রনাথ আর রাম ছাগল খাবার খায়, ঘুমায় পটি করে হাঁটাচলা করে। দেখো এত মিল বের করেছি কিন্তু তোমাকে অনেক চেষ্টা করেও বলতে পারিনি।
অরকুট তাই বললাম। আর আর একটা কথা মুখে হাসি আনলে বা কারোর সাথে কথা বললে কি পড়াশুনায় খুব ক্ষতি হবে???
সেদিন দীপ কিছুই জবাব দিতে পারেনি
কিন্তু প্রথা ভেঙ্গে রবিবার আবার অরকুট খুলে জবাব দিয়েছিল হাসার জন্য প্রকৃত কারণ চাই আর কথা বলার জন্য যোগ্য লোক চাই।
বিকেলের মধ্যেই উত্তর পেয়েছিলো শোনার আর বোঝার ক্ষমতা থাকলে অনেক হাসির খোরাক চারপাশেই পাওয়া যায় আর কথা বলার লোক উপযুক্ত কিনা জানার জন্য তার সাথে কথা বলতে হয় তাকে জানার চেষ্টা করতে হয়।
এরপরে আর কোনো যুক্তি খাটে না।
সুতরাং এরপর দীপ প্রতি ঘন্টাতে মোবাইল নিয়ে ম্যাসাজ চেক করে। কিছু লেখে কিছু উত্তর আসা করে।
সোমা আর দীপ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলে।
দীপ যেন বদলে গেছে। সোমা তাকে শিখিয়েছে জীবনে আনন্দ বন্ধুদের প্রয়োজন আছে। তাই দীপ এখন কিছুটা সকলের সাথে কথা বলে। অনুয়াল স্পোর্টস এর দিনেও গিয়েছিল মাঠে।
লাস্ট সেমেস্টার কিছুদিন আগে হটাত একদিন সোমা দীপ কে জিজ্ঞেস করে আচ্ছা কিছুদিন পর তো কলেজ শেষ তোমার কি করবে তারপর???
কি আর করবো যদি এর মধ্যে ক্যাম্পাসিং কোনো জব পাই করবো ,। তারপর কি করবে তারপর সেটেল করবো আস্তে আস্তে। বাড়ি মেরামত করবো একটা বাইক কিনবো।।।। দিয়ে বিয়ে করবো।
ও তার মানে তোমার আসল উদ্যেশ্য বিয়ে করা ??
না করার কোনো কারণ আছে, সবাই করে আমিও করবো।
বাবা মায়ের পছন্দ করা মেয়েকে বিয়ে করবে নিশ্চয়ই,??
হইত!!
ও ঠিক আছে আজ অফ হলাম। সোমা লগ আউট হলে গেলো।
এরপর দীপ আর কোনোদিন সোমা কে অনলাইনে পায় না। আর তার স্বভাবে কলেজ দেখেও কথা বলতে পারে না।
। সে কোনোদিন মুখ ফুটে সোমার ফোন নম্বর নেয় নি।
কিন্তু সে রোজ অরকুট খোলে কিন্তু সোমাকে কোনোদিন অনলাইন পায় না।।।।।
এভাবেই এসে গেল সেই দিন ফেওয়ারওয়েল দিন।
সারাদিন নানা অনুষ্ঠান, রাতে মিউজিক্যাল ধামাকা প্রায় মাঝপথে ,,,,দীপ হটাত কেনো যেনো অরকুট খুললো দেখলো কিছুক্ষন আগের ম্যাসাজ
সোমা ব্যানার্জী লিখেছে ওল্ড  হোস্টেলের বাইরের দিকের গেটের কাছে এসো,
দীপ প্রায় ছুটে গেলো সেখানে,
সোমা তাকে দেখে বলল আজ আমি ম্যাসেজ করে আধা ঘণ্টা এখানে না দাড়িয়ে থাকলে তো আর কোনোদিন কথা হতো না।
দীপ: কেনো আমি কি কথা বলিনা। তুমি তো অরকুট অন করনা।
সোমা: কি কারণে করবো শোনো তোমাকে ভেবেছিলাম আলাদা প্রথম দিন থেকে কিন্তু তোমার জীবনের এক চাহিদা বিয়ে করা, বিয়ে মানে করতে হয় বলেই করলাম এমন নোয়
আরে যেদিন কাউকে মনে হবে না পেলে জীবন বৃথা। জীবনের প্রতিটা মুহুর্ত জার সাথে উপভোগ করতে চাইবে তাকে বিয়ে করো।।।।
থাক আমার চিন্তা ধারা তোমার উপর কেনো চাপাবো।
তোমার জীবন তুমি ভালো বুঝবে ।।।।
বলে একটা প্যাকেট দীপের হাতে ধরিয়ে দিল।
বলে সেখান থেকে চলে গেলো।
দীপ প্যাকেট খুলে দেখলো একটা বিয়ের কার্ড
যেটাতে পাত্রীর যাইগাই লেখা সোমা আর পাত্র জায়গাই শূন্যস্থান।
নিচে লেখা এখানে আমি চাই তোমার নাম বসুক কিন্তু নিজেকে আগে তার জন্য প্রস্তুত করো।
আর না চাইলে ছিড়ে ফেলে দিও।।।
দীপ এক মুহুর্ত ভেবে মোবাইল খুলে অরকুট লগ অন করল।।।।।।।

Comments

Popular posts from this blog

প্রেম নতুন গল্প

কলেজ প্রেম ০১